শনিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১০

আমার মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলি

বিজয় দিবস আর স্বাধীনতা দিবসের আনন্দটা আমার কাছে অন্যস্বাদের। ১৬ই ডিসেম্বর আর 2৬শে মার্চ প্রতি বছরই আমার কাছে ধরা দিত অন্যভাবে। খুব কাছ থেকে আমি উপলব্ধি করতাম বছরের এই সময়টাকে। প্রতি বছরই আমাদের স্কুলের স্কাউট দল অংশগ্রহন করত বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে। তার জন্য ১‍মাস ধরে চলত অনুশীলন। শরীরচর্চা ও ডিসপ্লের কাজ। ডিসপ্লে অংশটা ছিল নাটকীয়তায় ভরপুর। ৭১ সালের যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে আমরা আয়োজন করতাম নাট্য প্রদর্শনীর। আমাদের মঞ্চ ছিল সমগ্র মাঠ। সেখানেই একটি ক্ষুদ্র যুদ্ধের মহরা ও কিছু ঘটনার সন্নিবেশ করে তুলে ধরতাম সেই কাল সময়গুলো। অভিনেতারা সবাই থাকত নির্বাক, একজন মাইকের মাইক্রোফোনে ফুটিয়ে তুলতো সবার উক্তি; মানুষের আহাজারি, মিলিটারীর দম্ভোক্তি , রাজাকারের উল্লাস কিংবা মায়ের করুন আহাজারি। স্কুলের সেই দিনগুলোতে কতকিছুই না করেছি। ধীরে ধীরে সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা থেকে হয়ে উঠেছিলাম মুক্তিযোদ্ধাদের দলনেতা। রাজাকার এর চরিত্রটা বরাবরই ছিল আমার কাছে খুব ঘৃণার। কিন্তুর আমার অভিনয় প্রতিভার জন্য আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক একবার আমাকে দিয়ে রাজাকারের চরিত্র করিয়ে ছিল। সে এক অন্যরকম অনুভূতি। সবাই সেদিন আমার অভিনয় দেখে গাল দিয়েছিল; কিন্তু সেই গালটাও ছিল অনেক আনন্দের আমার কাছে। শেষের ২টা বছর আমি ছিলাম পাঠক। সবার অভিনয় দেখে আমার তাদের উক্তি গুলো মাইক্রোফোনে বলতে হত। সে এক বহুরুপী অভিজ্ঞতা। একঐ কন্ঠে একই সাথে হাজারো রকমের কথা। যেন পুরো যুদ্ধের শব্দটা আমার মুখ দিয়ে বের হত। সামরিক বাহিনীর কুচকাঔয়াজ স্কুলের দিন গুলোতে আগে সেভাবে দেখতে পেতাম না সংবাদ ক্লিপিং ছাড়া। আর এখন সামরিক মহড়া দেখি, আর ভাবি কোথায় হারিয়ে গেল আমার যুদ্ধের দিন গুলি।

কোন মন্তব্য নেই: