মঙ্গলবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

সরস্বতী পূজা ও আমি

সরস্বতী পূজা প্রতি বছরই একটি নতুন মাত্রা নিয়ে আসে সেই ছোট বেলা থেকেই। আমি আজও কেমন যেন মনে করতে পারি সেই দিনটাকে যেদিন দেবী মায়ের সামনে পুরোহিত মশাই আমার হাতখড়ি দিয়েছিল। খুব মজা লাগত যখন প্রতিবছরই নতুন বই দেবী মায়ের সামনে রেখে নতুন বছরের পড়াশোনার প্রস্তুতি নেওয়া হত; ঠিক করা হত নতুন কোন লক্ষ্যমাত্রা।পূজার দিনটি চলত না কোন রকমের পড়াশোনা।খাবার দাবারের রকমটিও ছিল ভিন্ন স্বাদের। পূজার আগের দিন মা তৈরী করে বিভিন্ন রকমের মোয়া,দই, খই। সবই পূজার জন্য, পরোক্ষভাবে আমার জন্য। পূজার দিনটি আমাদের বাড়ীতে খুব ভিড় হয়। আমার মায়ের অনেক ছাত্রছাত্রী, তাদের পরিবার, পাড়ার ছেলেমেয়েরা আসে আমাদের বাড়ীতে।
যখন মাধ্যমিকস্তরের ছাত্র তখন পূজার পরই চলে যেতাম স্কুলের পূজাতে। সেখানের মজাটা ভিন্ন স্বাধের যেখানে পূজার থেকেও বড় হয়ে ওঠত অন্য কোন কিছু। সরস্বতী পূজাকে কেন্দ্র করে জীবনে একটি স্বাদ আমার অপূর্ণ আছে। সবসময়ই স্কুলের পূজা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ত্বে থাকত দশম শ্রেনীর ছাত্ররা। ষষ্ঠ শ্রেনী থেকেই সব সময় ভাবতাম কবে আমিও পূজার চাঁদা আনবার জন্য ক্লাস টাইমে প্রত্যেক শ্রেনী কক্ষে যাব, রাত জেগে পূজা আয়োজন করব, মানুষের বাড়ীতে যেয়ে কাঠ, ফুল যোগাড় করব। স্বাদটা অপূর্ণই রয়ে গেছে আমার। এখন খুব মনে পড়ে বার বার এটি।

পূজার আগের দিন রাতে ফুল যোগাড় করার একটি লক্ষ্য থাকতো সবার। কে কত ফুল আগামীকাল মায়ের পায়ের কাছে জড় করতে পারে; আমার অংশগ্রহন তেমন কখনই হয়নি। আমার দাদা ছিল ফুল জোগাড় করবার গুরু। আর আমি পাহারা দিতাম নিজেদের বাড়ীর ফুল গুলা যৈন কেউ না নিতে পারে। তবে একবার পলাশ ফুল যোগাড় করবার জন্য সাইকে নিয়ে বেড়িয়েছিলাম। এডভেঞ্চারই মনে হচ্ছিল, কারণ ফুল খুবই কম পাওয়া যায়।

যখন পড়াশোনার জন্য কোলকাতা ছিলাম, তখন একটি বিষয় আমার চোখে পড়ে। ওখানকরা ছেলেমেয়েদের মধ্যে ভ্যলেনটাইন ডের দেশীয় সংস্করণই হল এই পূজা। কারণ এই দিনে প্রতিদিনের দৃশ্যমান সহপাঠিনীটিও শাড়ী পরে নারী রূপে প্রথম মনে দোলা দিয়ে যায়, আসলেই মনে ফড়ফুরে মৃদু বাতাস লাগবার মতনই বিষয়। আর আমারও মনে পড়ে সেই সময়টিতে কেন আমার মনে পূজা আয়োজন করতে না পারার দুঃখটা এখনও বিধে আছে। কারণ পূজা আয়োজন করা ব্যাতীত বাস্তবের মনদেবীকে খুব কাছে পাবার সুযোগ বছরে খুব কমই কিন্তু আসে।

এখনও পূজার দিনটি আমার মন ঘুরে বেড়ায় আমার বাড়ীতে আমার পরিবারের সাথে; খুব মন খারাপ হয় এটা ভেবে কেন বড় হয়েছিলাম। এটাও সব সময় মনে হয় যদি পড়াশোনা শিখে বাবা মাকে দাদাকে ছেড়ে দূরে কোথাও থাকতে হবে এটা জানা থাকলে এই পড়াশোনা আমি কখনই শিখতাম না।

কোন মন্তব্য নেই: